শুক্রবার সকালে শান্তি নিকেতন বিশ্ব ভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে পানাগড়ে পৌঁছলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে পৌঁছতেই উত্তরীয়, ফুল দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বেলা বাড়ার সাথে সাথে ১০ টায় শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠান মঞ্চে হাজির হন আচার্য মোদী। প্রধানমন্ত্রীর সাথে হাজির হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের সকলকে উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বভারতীর ভাইস চ্যান্সেলর সবুজকলি সেন। এদিনের মঞ্চে নরেন্দ্র মোদী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, বিশ্বভারতীর ভাইস চ্যান্সেলর সবুজকলি সেন সহ অন্যান্যরা।
এদিনের এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষন রাখতে গিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভাঙা ভাঙা বাংলায় প্রথমেই বলে ওঠেন, আজকের এই শুভ সকালে আপনাদের সকলকে আমার সশ্রদ্ধ প্রনাম। শান্তি নিকেতনের কবি গুরু স্মৃতি বিজড়িত এই শান্তিনিকেতনে এসে আজ আমি খুব আনন্দিত ও শান্তি অনুভব করছি। এরপর তিনি ফিরে যান রাষ্ট্রভাষা হিন্দিতে। হিন্দিতে ভাষন রাখার শুরুতেই মঞ্চে উপস্থিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরী নাথ ত্রিপাঠী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্ব ভারতীয় উপাচার্য সবুজকলি সেন ও রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ ইন্সটিটিউটের উপাচার্য স্বামী আত্মপ্রীয় নন্দজী মহারাজ সহ সেখানে উপস্থিত বিশ্ব ভারতীয় অধ্যাপকগন ও যুবা সাথীদের প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন জানান। সেই সঙ্গে তিনি প্রথমেই বিশ্ব ভারতীর চান্সেলার হয়ে সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। কারন তিনি এখানে আসার সময় দেখতে পান কিছু ছেলে তাকে ইশারাতে বোঝায় এখানে পানীয় জলের বেশ অভাব রয়েছে। আর সেই কারনেই উপস্থিত সকলের কাছে যে সমস্ত অসুবিধা হয়েছে তা চান্সেলার হিসেবে প্রথমেই তিনি ক্ষমা চেয়ে নেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এর আগেও তিনি বেশ কিছু বিশ্ব ভারতীতে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু সেই সকল জায়গায় তার সৌভাগ্য হয়েছে অতিথির রূপে যাওয়ার। কিন্তু এখানে তিনি অতিথি হিসেবে নয় একজন চান্সেলার হিসেবে সকলের কাছে এসে হাজির হয়েছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এখানে আসার একটাই কারন লোকতন্ত্রের কারনে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন যার কারনে এখানে আসার তিনি সুযোগ পেয়েছেন বলে তিনি জানান।
এই ভাষণের মাঝে তিনি এই শান্তি নিকেতন সম্বন্ধে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, যখন তিনি গাড়ি থেকে নেমে মঞ্চে আসছিলেন সেই সময় তাঁর মাথায় চলছিল একটায় কথা, কথাটি হল এখানে এই শান্তিনিকেতনে কোন এক সময় কবিগুরু এই আশেপাশের এলাকায় কথাও বসে তাঁর চিন্তা ভাবনা কাগজে লিখছিলেন। এইখানকার মাটির প্রতিটি কোনায় রয়েছে কবিগুরুর সেই চিন্তা ভাবনা বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সেই সঙ্গে এদিন যারা এই বিশ্ব ভারতী থেকে ডিগ্রী পাচ্ছেন তারা এটিকে শুধু ডিগ্রী হিসেবে নয়, এখান থেকে পাওয়া শিক্ষাটি অমূল্য। এখানকার শিক্ষা যত পুরনো ততই আধুনিক। পুরনো যুগে ঋষি মুনিদের হাত ধরে শব্দকোষ আধুনিকতার ছোঁয়ায় নিয়ে আসেন কবিগুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর। কবিগুরু এই শান্তিনিকেতনকে একটি ঘর দিয়েছিলেন। সেখানে গোটা বিশ্ব এখন এসে বসেছে। আর যেখানে সম্পূর্ণ বিশ্বকে সমাহিত করতে পারার ভাবনা থাকে, সেটায় হচ্ছে ভারতীয়তা।
তবে তিনি তাঁর ভাষনে বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন, কোন একটি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত হয়, এমন ঘটনা খুবই বিরল। ভারত ও বাংলাদেশ দুটি আলাদা রাষ্ট্র কিন্তু দুটি দেশের হিত এক দুইজনের সাথে যুক্ত রয়েছে। তবে শুধু এই দুই দেশের মধ্যেই কবিগুরু সীমিত নন। বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে দেখেছেন কবি গুরুর প্রতি মানুষের ভালোবাসা। এক কথায় কবিগুরু আগেও বিশ্ব নাগরিক ছিলেন এখনও বিশ্ব নাগরিক আছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এদিন তাঁর ভাষণে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের এক উক্তি, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলোরে- তুলে ধরে বলেন, এমন ভাবেই এদিন যারা উপাধি পাবে তারা নিজেদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাবে। তারা এক পা এগোলে সরকার চার পা এগোবে বলেও তিনি জানিয়ে দেন। সেই সঙ্গে সফল ছাত্র ছাত্রীদের তাঁর মাতা-পিতা থেকে সারা দেশের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিক এই শুভ কামনা করে তিনি এদিনের ভাষন শেষ করেন।
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন নিচের লিংকে
https://www.youtube.com/embed/0HzYDlv18So